আওয়ামী লীগ সরকার ক্ষমতায় আসার পর থেকে সরকারি চাকরিজীবীদের নানা সুবিধা দিয়ে আসছে। ২০০৯-২০ সাল পর্যন্ত গত ১১ বছরে সরকার বেতন বাড়ানো থেকে শুরু করে বাড়ি, গাড়ি ঋণ সুবিধা দিয়েছে। এবার বাড়ি বা গৃহ নির্মাণ ঋণের কিস্তি পরিশোধে সরকারি চাকুরেদের ওপর যাতে চাপ না পড়ে সে জন্য সুবিধা আসছে।
এ ক্ষেত্রে ঋণের কিস্তি পরিশোধের উপায় হিসেবে বাসা ভাড়াকে ব্যবহারের সুযোগ করে দেওয়া হচ্ছে। অর্থাৎ বাসা ভাড়াই হবে গৃহঋণের ইএমআই বা সমহারে মাসিক কিস্তির উপায়। সম্প্রতি অর্থ বিভাগে অনুষ্ঠিত সরকারি চাকরিজীবীদের গৃহ নির্মাণ ঋণ কার্যক্রম নিয়ে বৈঠকে এসব সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।
এ ব্যাপারে অর্থ বিভাগের একজন দায়িত্বশীল কর্মকর্তা কালের কণ্ঠকে বলেন, বিষয়টি এখনো প্রাথমিক পর্যায়ে রয়েছে। এটি বাস্তবায়ন করতে হলে আমাদের সরকারি ব্যাংকারসহ সবার বেতন কাঠামোর ব্যাপারে চিন্তা করতে হবে। সব চিন্তা করেই সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে।
সূত্র মতে, সরকারি চাকরিজীবীদের গৃহ নির্মাণ ঋণ পরিশোধে সমহারে মাসিক কিস্তি বা ইএমআইয়ের টাকা বেতন থেকে কেটে নেওয়া হয়।
নতুন সিদ্ধান্ত অনুযায়ী, এখন থেকে সরকারি চাকুরেরা ইচ্ছা করলে বেতন থেকে টাকা কাটা বন্ধ করতে পারবেন। এর পরিবর্তে তাঁরা মাসিক কিস্তির টাকা পরিশোধে বাসাভাড়াকে ব্যবহার করতে পারবেন। তবে এ বাসাভাড়া কি গৃহ নির্মাণ ঋণ নিয়ে বানানো বাড়ির ভাড়া নাকি বেতনের সঙ্গে যে বাসাভাড়া দেওয়া হয়—তা এখনো সিদ্ধান্ত নেয়নি অর্থমন্ত্রণালয়।
এ জন্য একটি ধারণাপত্র তৈরি করছে অর্থ বিভাগ ও আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগ। শিগগিরই এ নিয়ে বৈঠকে বসবে দুই বিভাগ। মূলত গৃহ নির্মাণ ঋণে সাড়া না পাওয়ায় এ উদ্যোগ নেওয়া হচ্ছে। পাশাপাশি এটিকে আকর্ষণীয় করতে ব্যাপক প্রচারণা চালানোর চিন্তা-ভাবনাও করা হচ্ছে। এ জন্য বাস্তবায়নকারী সংস্থাগুলোর প্রত্যেক শাখায় গৃহ নির্মাণ ডেস্ক স্থাপন করা হবে।
প্রতিটি শাখায় ব্যানার, ফেস্টুন টাঙানো হবে। বিভিন্ন কনফারেন্স অথবা মিটিংয়ে গৃহ নির্মাণ ঋণ কার্যক্রমকে এজেন্ডাভুক্ত করে এটিকে কিভাবে সহজ, গ্রাহকবান্ধব ও আকর্ষণীয় করা যায় তা নিয়ে আলোচনা করা হবে। গ্রাহকদের সঙ্গে সুসম্পর্ক গড়ে তুলে গৃহ নির্মাণ ঋণে আগ্রহী করে তোলা হবে। আর এসব উদ্যোগ নেওয়ার প্রধান কারণ, গৃহ নির্মাণ ঋণে সাড়া পাওয়া যায়নি। এ পর্যন্ত মাত্র ৩০০ সরকারি চাকুরে গৃহ নির্মাণ ঋণের সুবিধা নিয়েছেন।
সবচেয়ে বেশি আবেদন এবং ঋণ পেয়েছেন অতিরিক্ত সচিব পর্যায়ের কর্মকর্তারা। তার পরই আছে যুগ্ম সচিব পর্যায়ের কর্মকর্তারা। তাঁদের বেশির ভাগই আবার সর্বোচ্চ ৭৫ লাখ টাকার জন্য আবেদন করেছেন। বাকি যাঁরা আবেদন করেছেন তাঁদের মধ্যে সবচেয়ে বেশি আবেদন এসেছে ৬৫ লাখ টাকার জন্য।
আবার ক্যাডার সার্ভিসের কর্মকর্তারা যতটা এগিয়ে— ঠিক ততটাই পিছিয়ে আছেন নন-ক্যাডার কর্মকর্তারা। তবে কিছুসংখ্যক নন-ক্যাডার কর্মকর্তা ঋণের জন্য আবদেন করেছেন। আর গৃহ নির্মাণ ঋণের জন্য আবেদনের সংখ্যা যত তার থেকেও ঢেড় বেশি বাদ পড়ার সংখ্যা। ভুলভাবে আবেদন করার খেসারত হিসেবে বাদ দেওয়া হচ্ছে অনেক কর্মকর্তার আবেদন।
অর্থ বিভাগের হিসাব বলছে, ১৪ লাখ সরকারি চাকরিজীবীর গৃহ নির্মাণ ঋণের সুবিধা দেওয়ার কারণে এ খাতে এক হাজার কোটি টাকা ভর্তুকির প্রয়োজন পড়বে। পাশাপাশি প্রায় দেড় হাজার বিচারক এর আওতায় আছেন। এবার নতুন করে যোগ হচ্ছেন ১৪ হাজার পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক। ফলে ভর্তুকির অঙ্কটা দেড় হাজার কোটি টাকা ছাড়াতে পারে।
এদিকে আগামী এপ্রিল থেকে ঋণ ও আমানতে ব্যাংক সুদহার নয়-ছয় শতাংশ কার্যকর হচ্ছে। তাই সরকারি চাকরিজীবীদের গৃহ নির্মাণ ঋণের সুদহারও করা হয়েছে ৯ শতাংশ। তবে সবাই এ অঙ্কে ঋণ নিতে পারবেন না। নতুন বছরে যাঁদের ঋণ প্রস্তাব মঞ্জুর হয়েছে তাঁরাই শুধু ৯ শতাংশ সুদহারে গৃহ নির্মাণ ঋণ পাবেন।
যেসব ঋণ প্রস্তাব গত বছর অনুমোদন দেওয়া হয়েছে তাঁদের ১০ শতাংশ সুদেই ঋণ পরিশোধ করতে হবে। তবে সুদহার ১০ বা ৯ যতই হোক ঋণগ্রহীতা সরকারি চাকরিজীবীদের সমপরিমাণ অর্থাৎ ৫ শতাংশ হারে ঋণ পরিশোধ করতে হবে। যাঁরা ১০ শতাংশ হারে ঋণ নিয়েছেন তাঁদের ক্ষেত্রে সরকার ভর্তুকি দেবে ৫ শতাংশ। আর ১ শতাংশ কমে অর্থাৎ ৯ শতাংশ ঋণ নেওয়ার সুযোগ পাওয়া ঋণগ্রহীতাদের ক্ষেত্রে সরকার ভর্তুকি দেবে ৪ শতাংশ।
উল্লেখ্য, গৃহ নির্মাণ ঋণ নীতিমালা অনুযায়ী, একজন সরকারি চাকরিজীবী সর্ব্বোচ্চ ৭৫ লাখ এবং সর্বনিম্ন ২০ লাখ টাকা ঋণ নিতে পারবেন।
সোনালীনিউজ/এইচএন